https://youtu.be/1gfG4BRfzoU
চাঁদপুর, মতলব ( উত্তর )
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইয়াছে প্রাণ।মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি,চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
বন্দে আলী মিয়ার কবিতায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে এদেশের গ্রামের হৃদয় ভোলানো রুপ। গ্রাম মানেই সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, মনোরম এক জনপদ। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, টইটুম্বুর খাল-বিলে নয়নাভিরাম শাপলা পদ্ম! গ্রাম মানেই পাখিদের কোলাহল, ঝিঁঝির ডাক আর জোনাকির স্বপ্নীল ওড়াউড়ি।
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঢাকা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রাম। গ্রামগুলোর অপার সৌন্দর্য একইসঙ্গে নয়নাভিরাম ও বৈচিত্রময়। প্রত্যেকটি ঋতুর পরিবর্তনের সাথে তারা পাল্টে যায় নতুন রুপে, নতুন বৈশিষ্ট্যে। যদিও ক্রমাগত নগরায়নের ফলে গ্রামের সৌন্দর্য এখন হুমকির মুখে, গ্রামের নানা ঐতিহ্য, রুপ আর সৌন্দর্য আর দেখতেই পাওয়া যায় না। তবুও যা টিকে আছে তার কতটুকুই বা উপভোগ করি আমরা? গ্রামের মনোলোভা সৌন্দর্য অবগাহন করতে তাই তো পল্লীকবি জসিমউদ্দীন আকুল কন্ঠে ডেকেছিলেন ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতায়-
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
ঘন কালো বন-মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
তবে গ্রামগুলো সবচেয়ে সুন্দর রুপে সাজে বসন্তে। গাছে গাছে নতুন পাতার আগমনে প্রকৃতি সাজে নবরুপে। ফুলে ফুলে চারপাশ হয়ে ওঠে বর্ণিল। পলাশ, মহুয়া, শিমুল, কনকচাঁপা, কৃঞ্চচূড়া, দোলনচাঁপা, বেলী সহ অধিকাংশ ফুল ফুটে এই সময়ে। গ্রামের ঝোঁপে ঝাড়ে বসন্ত আনে প্রাণের দোলা।
তবে শুধু ঋতু নয়, অঞ্চলভেদেও গ্রামের সৌন্দর্যের বৈচিত্র লক্ষ্য করার মতো। উত্তরাঞ্চল, যেমন- রংপুর, দিনাজপুরের গ্রামগুলোতে দেখা মিলবে সারি সারি পানের বরজ, লিচুর বাগান আর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠের। আবার সিলেট ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকার গ্রামগুলোর দৃশ্য পুরোটাই ভিন্নরকম। উচু-নিচু টিলা আর বন এসব এলাকার গ্রামগুলোকে সাধারণ গ্রামের বৈশিষ্ট থেকে একেবারেই আলাদা করে রেখেছে।
হাওর অঞ্চলের গ্রামগুলোতে জল ও ডাঙার মিশেলে যে অপরুপ সৌন্দর্যের দেখা মেলে, তা এতটাই মনোলোভা যে না দেখলে অনুভব করা শক্ত। জেনে রাখা ভালো, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার অংশবিশেষকে চিহ্নিত করা হয় হাওরাঞ্চল হিসেবে।
তবে সবুজের সমারোহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামেরই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ছবির মতন গ্রামগুলো সৃষ্টিকর্তা যেন এঁকেছেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। সব গ্রামেই চালতা, বেলী, নয়নতারা, কলমি, কামিনী, অপরাজিতা, কাঠালচাঁপা, দোলনচাঁপা, শিমুল, ঝুমকো জবা, শাপলা, জারুল, ঘাসফুল সহ হাজারো প্রকৃতির ফুল গ্রামগুলোর আনাচে-কানাচে, ঝোপে-ঝাড়ে শোভাবর্ধন করে আপন মহিমায়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় শালিক, ময়না, টিয়া, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, বক, বউ কথা কও, তিতির, চখাচখি, কাঠঠোকড়া, মোহনচূড়া, মাছরাঙা, পাপিয়া, ফিঙে, তোতা সহ হাজারের কাছাকাছি প্রজাতির পাখি। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, জাম, করমচা, নারিকেল, সুপারি তাল সহ অসংখ্য প্রজাতির গাছ আর লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা গ্রামগুলোর মোহনীয়তাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। দেশের যেকোনো গ্রামে বাঁশঝাড় কিংবা বটের ছায়ায় বসে পাখির কিচির-মিচিরের সাথে একটি লগ্ন আপনার হৃদয়কে হাজার বছর বাঁচার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট।